নবীজির (স.) সবথেকে বড় সুন্নত কি? - মাওলানা তারেক জামিল (বাংলা সাবটাইটেল সহ)


আদমের (আ.) সন্তানেরা, শোনো আল্লাহ কি বলছেন? কাদেরকে বলছেন?
ঈমানদারদের?
না।তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের?
না।পর্দা নিশি মহিলাদের?
হালাল রোজগার কারীদের?
তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের?
হাজীদের?
ওরাকারীদের?
হে আদমের সন্তানেরা!
তাদের সবাইকে আল্লাহ বলছেন…
নামাজীদেরকে না।
হে আদমের সন্তানেরা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। অবাধ্য সন্তানকে তো মা-বাবাও বাড়ি থেকে বের করে দেয়। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় যে, আমরা আমাদের সন্তানকে অবাধ্যতা কারণে ত্যাজ্যপুত্র করে দিয়েছি। আমরা যার বান্দা, আমাদেরকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, আমরা তারই অবাধ্যতা করছি। এই সকল অবোধ্যতার পরও আল্লাহ আমাদেরকে বলছেন, "আমি তোমাকে ভালোবাসি।"
নবীজী (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, "ইসলামের সবথেকে মজবুত আমল কি?"
সাহাবীরা (রাযি.) বলল, "নামাজ।"
নবীজী (স.) বললেন, "না।"
সাহাবীরা (রাযি.) বলল, " জিহাদ।"
নবীজী (স.) বললেন, "না।"
সাহাবীরা (রাযি.) বলল, " রোজা।"
নবীজী (স.) বললেন, "না।"
সাহাবীরা (রাযি.) বলল, " হজ।"
নবীজী (স.) বললেন, "না।"
সবাই হয়রান হয়ে বললেন, "ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা তো জানি না, আপনি বলুন।"
নবীজী (স.) বললেন, "ইসলামের সবথেকে মজবুত আমল পরস্পরকে আল্লাহর জন্য মহব্বত করা।"
এই বার্তা মানুষদেরকে দাও।ধরো আমার আর তোমার মতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এর জন্য কি আমি তোমাকে ঘৃণা করব?
সম্পর্কের মধ্যেতো ভালোবাসা রাখতে হবে।আমার দৃষ্টিভঙ্গি অন্য, ওয়াসিমের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য, নাদিমের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য, আরসালানের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য।ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ, দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ।দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণেতো একে-অপরকে ঘৃণা করা ঠিক নয়।এই বার্তা সবাইকেএই আমল সবথেকে উত্তম?
বলছি তো নবীজি (স.) বলেছেন, "ইসলামের সবথেকে মজবুত আমল পরস্পরকে আল্লাহর জন্য মহব্বত করা।"
জান্নাতে একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য অনুমতি প্রয়োজন হবে।ধরো, আমি কারো বাসায় গেলাম, গিয়ে তার বাসায় বেল দিলাম।সে যদি চায় তো দরজা খুলবে।জান্নাতে কারো কার সাথে দেখা করার জন্য, তার থেকে অনুমতি নেওয়া লাগবে।যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালবাসবে, তাদের জন্য কোন অনুমতি প্রয়োজন হবেনা কারো সাথে দেখা করার জন্য।আল্লাহর জন্য ভালোবাসা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
আল্লাহর জন্য ভালোবাসা দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, কোন স্বার্থ ছাড়া কাউকে ভালোবাসা।এখন বুঝতে পেরেছ?
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য?
হ্যাঁ, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমি আল্লাহর নবীর (স.) উপর কোরবান হই, এই কথা আমি আগেও আপনাদেরকে শুনিয়েছি। নবীজি (স.) বললেন, "আমার ছেলে আনাস (রাযি.) আমার সবথেকে আজিম সুন্নত হচ্ছে তুমি দুনিয়ার মানুষদের থেকে নিজের মনকে পরিষ্কার রাখ।"
এখানে মুসলমান বলেন নাই, বলেছেন সমস্ত দুনিয়ার মানুষদের থেকে। নবীজীকে (স.) রহমাতুল্লিল আলামিন বলা হয়েছে, মুসলিমীন বলা হয় নাই। অল্প সময়ের জীবন মরে যেতেই হবে।তাই এই অল্প সময়ের মধ্যে মানুষকে ভালোবাসা বিলাও। আল্লাহর কসম! এই আমল করলে বড় বড় ওলীরা আপনার কদম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না। এটার কারণ কি?
ডিমান্ড এবং সাপ্লাই এর একটি সূত্র হচ্ছে, যখন ডিমান্ড বেশি হবে সাপ্লাই কম হবে তখন মূল্যবৃদ্ধি হয়ে যায়। সমস্ত পৃথিবীর মানুষদের প্রয়োজন ভিন্ন, শখ ভিন্ন। কিন্তু সমস্ত পৃথিবীর মানুষদের এই প্রয়োজন যে, আমি যেন ভালোবাসা পাই। ভালবাসার ডিমান্ড এত কিন্তু সাপ্লাই নাই বললেই চলে। নামাজি অনেক আছে, রোজাদার অনেক আছে, যিকিরকারী অনেক আছে, তিলাওয়াতকারী অনেক আছে কিন্তু ভালোবাসা প্রদানকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। যেমন দুনিয়ার বাজারে মধ্যে সাপ্লাই কমে গেলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়ে যায়।তেমনি তেমনি আখেরাতের বাজারে আল্লাহর জন্য যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে তাদের মূল্য সব থেকে বেশি হবে। আমি উড়োজাহাজে করে যাচ্ছিলাম।বাজির আলী নাম ছিল এক এয়ারহোস্টেসের। সে আমাকে বলল, "স্যার আমি আপনার ওয়াজ প্রতিদিন শুনি।আপনি কোন দলের প্রতিনিধিত্ব করেন না। আপনি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনি আমাদের খুশি করে দিয়েছেন।আপনি আমাদেরকে ইসলামের পরিচয় দিয়েছেন।"
সে আমাকে বলল, "আমি যেখানে থাকি সেখানে ৬ টি মসজিদ রয়েছে।একটি মসজিদও মুসলমানদের নাই।কোন মসজিদের উপরে বেরলবি লিখা আছে, কোন মসজিদের উপরে দেওবন্দী লেখা আছে, কোন মসজিদের উপরে ইমাম বাড়াগা লিখা আছে, কোন মসজিদের উপরে আহলে হাদিস লিখা আছে আল্লাহর একটি মসজিদ নাই। আমি বললাম, "আমার বন্ধু! তুমি তো আমাকে খুশি করে দিয়েছো।"

No comments

Powered by Blogger.