আল্লাহ ধনী বানান না কেন সবাইকে? - মাওলানা তারেক জামিল (বাংলা সাবটাইটেল সহ)
দানশীল হও, সত্যবাদী হও। আল্লাহ কৃপণকে পছন্দ করেন না। দানশীলের সাথে সম্পর্ক
কখনো ভাঙ্গেন না। আর কৃপণের সাথে সম্পর্ক কখনো তৈরি করে না। বনি ইসরাইলের ঘটনা, একদা
শয়তান এক ব্যক্তির সাথে দেখা করল। সে ব্যক্তি শয়তানকে জিজ্ঞাসা করল, "একটি গোপন
কথা বলবে?"
শয়তান বলল, "কি?"
সে বলল, "তোমার বন্ধু কে?"
শয়তান উত্তর দিল, "তিনজন আমার বন্ধু।
১. মদ্যপানকারী,
২. রাগী (যে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা),
৩. কৃপণ (যে খরচ করে না)।
এই তিনজন আমার খাঁটি বন্ধু। আর যদি কোনো বদবখতের মধ্যেই তিন গুণীই থাকে, তাহলে আমি তাকে পীর বানিয়ে মুরিদ হয়ে যাই তার। তাহলে সে আমার থেকে বড় শয়তান।"
প্রথমে আপনারা ব্যবসায়ীদের সত্যবাদী বানান, আমানতদার বানান, দানশীল বানান, আল্লাহর জন্য ত্যাগী বানান। আল্লাহ বলেছেন এই কাজ
করা যাবে না, সঙ্গে সঙ্গে সে কাজ থেকে বিরত হয়ে যাবে। সুদ নেওয়া যাবে না সঙ্গে সঙ্গে
সব থেকে বিরত হয়ে যাবে, মিথ্যা বলা যাবে না সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা থেকে বিরত থাকবে, প্রতারণা
করা যাবেনা সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণা থেকে বিরত থাকবে। সৎ ভাবে আমানতদার হয়ে ব্যবসা পরিচালনা
করবে, সেটাই করবে। লাভ হলে হলো, ক্ষতি হলে হলো। রিজিক আল্লাহর খাজানার মধ্যে রয়েছে।
তারা জানেনই না আমাদের নবীজি (স.) কে ছিলেন?
পথ প্রদর্শকের দায়িত্ব নিয়ে তো তিনি এসেছিলেন। তিনি সত্যবাদী কিভাবে
হতে হয় তা শিখেছেন, আমানত কিভাবে হতে হয় তা শিখিয়েছেন, মানুষকে কিভাবে ভালবাসতে
হয় তা শিখিয়েছেন, লজ্জা কি তা শিখিয়েছেন, পাক-পবিত্র কিভাবে হতে হবে তা শিখিয়েছেন,
দানশীলতা শিখিয়েছেন।হযরত আলীকে (রাযি.) কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনার কোনো ইচ্ছে
আছে?"
তিনি উত্তর দিলেন, "আমার যত জ্ঞান ছিল তা কেউ আমার থেকে নেয়নি, আর আমার যত দানশীলতা ছিল সেই অনুযায়ী কেউ আমার থেকে চাইনি। এই দুইটি ইচ্ছে আছে
আমার মনের মধ্যে।"
আল্লাহ দানশীলকে পছন্দ করেন (যে সম্পদ খরচ করে তাকে)। আল্লাহ বলেন, "কৃপণ
জাহান্নামের নিকটে, আল্লাহ থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে। দানশীল
জান্নাতের নিকট, আল্লাহর নিকটে, মানুষের নিকট, জাহান্নাম থেকে দূরে।"
যখন বনী ইসরাইল পূজা করল, তখন আল্লাহ বলেন সবাইকে কতল করে ফেলো। যখন সামরী ধরা পড়লো,
যে পূজা শুরু করিয়েছিল। আল্লাহ তার জন্য সুপারিশ করলো, "মুসা তাকে ছেড়ে দাও।"
মুসা (আ.) বললেন, "সমরীকে ছেড়ে দিব, সেইতো শির্ক করিয়েছে।"
আল্লাহ বললেন "এই কমবখত দানশীল। দানশীলকে কতল করাতে আমার ইচ্ছে করছে না। আমি এমনিতেই তাকে ধ্বংস করে দিব।"
তার কুফর ছিল, নিফাক ছিল, কিন্তু তার দানশীলতা তাকে কতল থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। যাকাত দানশীলতা সর্বনিম্ন
স্তর। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে মানুষ কৃপণ থেকে বের হয়ে আসে, কিন্তু দানশীলদের অন্তর্ভুক্ত
হয় না। সে কৃপণ ও দানশীল এর মধ্যে অবস্থান করে। তাকে কেউ কৃপণও বলতে পারবেনা, কেউ
দানশীলও না। একদা খিসরা পারভেজের দরবারে একজন জেলে মাছ নিয়ে আসলো। তার অনেক ভালো লাগলো।
সে বলল, "তাকে চার হাজার দেরহাম বা দিনার দিয়ে দাও।"
সে যখন এটি বলল তখন তার স্ত্রী বলল, "এত বড় সম্পদ তুমি শুধু মাছের জন্য যদি খরচ করো, তাহলে তোমার খাজানা খালি হয়ে যাবে। তার মাছ তাকে দিয়ে দাও
এবং টাকা তার থেকে ফেরত নাও।"
খিসরা পারভেজ বলল, "আমি এত বড় বাদশাহ, আমার টাকা ফেরত নিতে লজ্জা করে।"
তার স্ত্রী বলল, "আমি তোমাকে ফেরত দেওয়ার পন্থা বলে দিচ্ছি। তুমি জিজ্ঞাসা করবে জেলেকে এটি নর নাকি মাদাম মাছ। যদি সে বলে নর মাছ তাহলে
বলবে আমাদের মাদাম মাছ দরকার ছিল। আর যদি সে বলে মাদা মাছ তাহলে বলবে, আমাদের নর মাছ
দরকার ছিল। এভাবে টাকা ফেরত নিয়ে নিবে।"
জেলেকে ডেকে আনলেন এবং বললেন, "এই মাছটি নর না মাদা?"
জেলে বলল, "হুজুর এটি হিজরা।নরও না, মাদাও না।"
সে বলল, "তাকে চার হজার আরো দিয়ে দাও।"
যে যাকাত দেয় সে দানশীল হয়না, কিন্তু কৃপণ হয়না। আড়াই টাকার মধ্যে এক
পয়সার যদি বাড়িয়ে দেয়, তাহলে তার নাম দানশীলদের মধ্যে লিখা হয়ে যাবে। দানশীলতার
কোন সীমা নেই। জেলে বলল, "হুজুর এটি হিজরা।নরও না, মাদাও না।"
সে বলল, "তাকে চার হজার আরো দিয়ে দাও।"
বাদশার স্ত্রী আরো রাগান্বিত হয়ে গেল আট হাজার দিয়ে তো তার পুরো বংশের জন্য যথেষ্ট। একদিন দিনারর পড়ে
গেল, জেলে সেটিকে উঠিয়ে নিল। তার স্ত্রী বলল, "দেখেছ এই কমবখত জেলেটি
তুমি এত দান করেছ, তার সমস্ত বংশের জন্য যথেষ্ট। এক দিনার পড়েছে সেটি সে উঠিয়ে নিল।
সে তো তোমার অপমান করেছে, তার থেকে টাকা ফিরিয়ে নাও। "
বাদশা জিজ্ঞেসা করল, "তোমাকে আমি এত দান করলাম এরপরও এক দিনার কেন উঠালে?"
জেলে বলল, "এর মধ্যে আপনার নামের মহর ছিল, যদি কারো পা এটির মধ্যে পড়ে যেত তাহলে বেয়াদবি হত, এই জন্য আমি উঠিয়ে নিয়েছি।"
বাদশা বলল, "তাকে আরও চার হাজার দিয়ে দাও।"
ব্যবসায়ীদের বলছি, দানশীলতা শিখুন, সত্য কথা বলুন, আমানতদারী শিখুন, ব্যবসা থেকে সুদ বের
করুন, মিথ্যা বের করুন। যদি এগুলো করতে পারেন, তাহলে আল্লাহ আপনার জন্য জমিনে আসমানের
দরজা খুলে দিবেন। গরিবদের উপর খরচ করুন। এটি আল্লাহ পছন্দ করেন। আল্লাহ যদি চান সবাইকে
ধনী বানিয়ে দিতে পারেন। একে অপরের মুখাপেক্ষী বানিয়েছেন। আল্লাহ দানশীলতা পছন্দ করেন।
এক সাহাবী (রাযি।) এসে নবীজীকে (স.) বললেন, "আমার প্রয়োজন রয়েছে আমাকে সাহায্য
করুন।"
নবীজি (স.) বললেন, "এখন আমার কাছে কোন কিছু নেই।"
সাহাবী (রাযি.) বলল, "তাহলে আমি অন্য কারো থেকে নিয়ে নেই, আপনি আমার বদলে তাকে পরিশোধ করে দিয়েন।"
নবীজী (স.) বললেন, "আচ্ছা ঠিক আছে।"
হযরত ওমর (রাযি।) বললেন, "আপনার কাছে আছে আপনি খরচ করুন।কিন্তু আপনার কাছে নেই, তারপরও খরচ করছেন।অন্য মানুষেরা আপনার নামে কর্য নিচ্ছে।"
পিছনে একজন সাহাবী ছিল আব্দুল্লাহ বিন হুজাইফা (রযি.)। তিনি নবীজীকে (স.) বললেন, "ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি খরচ করুন, অভাবের ভয় করবেন না।"
নবীজি (স.) হেসে উত্তর দিলেন, "আমাকে আল্লাহ এই কাজ করার হুকুম দিয়েছেন। আমি খরচ করব, আল্লাহ কাছে অভাবের ভয় করব না।"
যাইহোক বাচ্চারা, সত্য কথা বলবে। আমি দুঃখের সাথে বলছি,
আমাদের জ্ঞান অর্জনের প্রতিষ্ঠানগুলো জ্ঞানার্জনের প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান।
তারা বাচ্চাদের জ্ঞান দিচ্ছে না। তোমরাও ছাত্র নয়, ডিগ্রিধারী। তোমাদেরও জ্ঞান নয়,
চাকরি চাই। তোমাদের জ্ঞান অর্জনের শখ নেই, তাদেরও জ্ঞান বিতরণের শখ নেই। তাদের রোজগার
করার শখ আছে, আর তোমাদেরও ডিগ্রি আর চাকরি শখ রয়েছে। যারা বিতরণ করবে তাদের বিতরণ
করার ইচ্ছে নেই, যারা গ্রহন করবে তাদেরও গ্রহণ করার ইচ্ছে নেই। সেই জাতিই উন্নতি করবে,
যাদের জ্ঞান নিজেদের হবে। তোমরা তো বাইরে থেকে জ্ঞান অর্জন করো। ডাক্তাররা বলতেন, মাখন
খাবেন না, মলাই খাবেন না, আপনার হার্টের সমস্যা হবে। আমার ভাই, হাটের ডাক্তার। সে বলল,
খান আমেরিকার থেকে রিপোর্ট এসেছে। তোমাদের সকল জ্ঞানীরা তো সেখানে আছে, তারা যা বলবে
তাই হবে। আপনারা আমার সন্তান। এর ওপরে নাঈম ভাই আমাকে এখানে ওয়াজ করতে বলেছে। আমি
বললাম, "আমি অনেক ক্লান্ত কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি বিদায় আমি করব। আরেকটি কারণ
রয়েছে সেটি হল, আমার ওয়াজের দ্বারা যদি এখানে কারো জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে
সেটি আমার জন্য যথেষ্ট।"
যে জাতি সত্যবাদী, তাদেরকে কেউ ক্ষতি করতে পারবেনা। যে জাতি আমানত, তারা
দুর্ভিক্ষের শিকার হবে না কখনো। যে জাতি ন্যায় পরায়ন হয়, তারা কখনো ধ্বংস হয় না।
যে জাতি মিথ্যাবাদী, আমানতের খিয়ানত করে, অত্যাচার করে, সে জাতি কখনো উন্নতি করতে
পারে না। মেট্রিকের সময় ইংরেজির 2 টি বই ছিল। একটি মোটা বই ও একটি পাতলা বই। যে পাতলা
বইটি ছিল, সেই পাতলা বই এর মধ্যে একটি গল্প ছিল, সেটি আমার মনে পড়ে গিয়েছে। একটি
শহরের কুকুর জঙ্গলে যেত। তার সাথে জংলি কুকুরের বন্ধুত্ব হয়ে গেল। জংলি কুকুর শুকনো
ছিল, আর শহরের কুকুর স্বাস্থবান ছিল। একদিন জংলি কুকুর শহরের কুকুরকে জিজ্ঞাসা করল,
"বন্ধু তুমি কি খাও?"
শহরের কুকুর উত্তর দিল,
"আমি অনেক উত্তম খাবার খাই।"
শহরের কুকুর বলল, "আমি তো এই সকল খাবার কখনো খাইনি, তোমার মুখে নাম শুনলাম প্রথমে। আমাকেও নিয়ে যাও আমিও
কিছু খাবো। তোমার মত স্বাস্থ্যবান হতে পারব।"
শহরের কুকুর বলল, "আচ্ছা চলো আমার সাথে।"
সে যখন জঙ্গল থেকে বের হল, আলোর কারণে শহরের কুকুরের গলায় একটি পাটা দেখতে পারলো। তখন সে শহরের কুকুরকে
জিজ্ঞাসা করলো, "আমার ভাই তোমার গলার মধ্যে এটি কি?"
শহরের কুকুর বলল, "এটি গোলামীর চিহ্ন। আমি তাদের খেদমত করি, তার বদৌলতে তারা আমাকে উত্তম উত্তম খাবার দেয়।"
জংলি কুকুর বলল, "তোমাকে তোমার উত্তম খাবার মোবারক, আমার স্বাধীনতা আমাকে মোবারক।"
পরাধীন হয়ে উত্তম উত্তম খাবার খাওয়া থেকে, আমার কাছে স্বাধীন হয়ে ক্ষুধার্ত থাকা উত্তম। আমার প্রিয়রা, আপনারা
সত্যবাদী হন, আমানতদার হন, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার সাথে থাকুন, ন্যায় পরায়ন হন,
ধৈর্য ধারণ করুন। আপনারা এখনও বাচ্চা। আপনারা আপনাদের পিতা-মাতাকে সম্মান দিন, শিক্ষকদের
সম্মান দিন। ভালো মানুষ কিভাবে হয়?
ভালো মানুষ হয়, নবীজির (স.) অনুসরণ করা দ্বারা। আমরা সেই জীবন ব্যবস্থা
শিখি নাই। অল্প সময়ের মধ্যে আমি আর কতটুকু ওয়াজ করতে পারবো। যদি আপনাদের মনে আমার
কোন কথা ভালো লেগে থাকে, তাহলে গ্রহণ করবেন। এই তাবলীগের কাজ, নবীজির (স.) জীবন ব্যবস্থা
শিখার জন্য। যখন আপনারা ছুটি পাবেন, অল্প সময়ের জন্য তাবলীগে সময় দিবেন, আপনারা অনেক
লাভবান হবেন। এটি জীবন পরিবর্তনকারী কাজ।
No comments