তারিক জামিল সাহেব পতিতালয়ে কেন যান? - মাওলানা তারেক জামিল (বাংলা সাবটাইটেল সহ)
সময়ের সব থেকে বড় দাবি হচ্ছে, আমরা যেন মানুষের পা ধরে আল্লাহর পথে আহবান করি। লাহোরে এক পতিতা মেয়ে
ছিল। আমি তাকে সালাম দোয়া করতে করতে, এক সময় আল্লাহর ফজলে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি
হয়ে যায়। এক জায়গায় শুটিং হচ্ছিল। আমি তাকে ফোন করে বললাম, "আমি লাহোরে আছি
আমার সাথে দেখা করতে পারবে?"
সে বলল, "আমি এখন শুটিং করছি, দশটা বাজে শুটিং শেষ হবে।"
আমি বললাম, "আচ্ছা মা যখন তোমার শুটিং শেষ হবে, এসে পড়ো আমার কাছে। যদি লেটও হয় তাও এসে
পরো।"
এটি ৮টা বাজে ঘটনা। প্রায় নয়টা বাজে সমস্ত শুটিং টিম ডাইরেক্টর সহ আমার সাথে দেখা করতে এসে পরল। আমি হতবাক হয়ে গেলাম।
আমি বললাম, "তুমি তো বলছিলে যে, তুমি দশটা বাজে অবসর হবে।"
আমি আমার ডাইরেক্টরকে বললাম, "মাওলানা তারিক জামিল সাহেব আমাকে বলেছে, যখন আমি অবসর হই তার সাথে দেখা করার জন্য।"
ডাইরেক্টর বলল, "মাওলানা তারিক জামিল সাহেব, তোমার মত মেয়েকে ফোন করবে এটি কিভাবে সম্ভব?"
মেয়েটি বলল, "আপনি এটি বিশ্বাস করতে পারছেন না, মাওলানা সাহেব আমাকে মেয়ে বলে সম্বোধন করেন।"
ডাইরেক্টর এটি শোনার পর তৎক্ষণাৎ শুটিং অফ করে দিল। ডাইরেক্টর বলল,
"আমি সেই ব্যক্তিকে দেখতে চাই, যে কিনা একজন পতিতাকে মেয়ে বলে।"
সবাই আমার সাথে দেখা করতে এসে পড়ল। শুধু মিম্বরে বসে ওয়াজ
করার তোমাদের শখ থাকে। আমাদের কেউও আল্লামা বলা হোউক, আমাদের কেউ জুতা উঠাক, ব্যাগ
উঠাক, ভিআইপি প্রটোকল হোউক। শাহ্ ঈসমাইল শহীদ পতিতালয়ে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন।
মতি পতিতার কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ আমাকে বড় কথা থেকে বাঁচাক।
১৮৩১ সালে উনি শহীদ হন। ১৮৩১ সালের পূর্বে, প্রায় ১৮১০-১৮২০ সালে উনি পতিতালয়ে যান
দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে। তিনি দিল্লির অধিবাসী ছিলেন। এরপরে আল্লাহর ফজলে পতিতালয়ে দ্বীনের
দাওয়াত নিয়ে আমাকে যাওয়ার তৌফিক দিয়েছেন। অতঃপর আমি তাদের বাসায় গিয়েছি, গিয়ে
তাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর আল্লাহ আমাকে তৌফিক দিয়েছেন।
তাদের ওপর খরচ করার তৌফিক দিয়েছেন, তাদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর জন্য। ৮-৯ বছর হতে
যাচ্ছে, এখন তুলাম্বার পতিতালয়ে তালিম (প্রতি সপ্তাহে দ্বীনের আলোচনা হয়)। সেখানে
পতিতারা এসে বসে। কেউ কালেমা পারত না। কালেমা শিখিয়েছি, ওজু করতে পারত না, ওযু শিখিয়েছে,
নামাজ শিখিয়েছে। অনেক মেয়ের বিয়ে করিয়েছে। অনেক মেয়ে বলেছে, “যদি আমাদের ভরণপোষণের
দায়িত্ব নেন, তাহলে আমরা এই কাজ ছেড়ে দিব।“
আমি তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব
নিয়েছি। সে ঘরে বসে বসে খাচ্ছে কিন্তু খারাপ কাজ করছে না। আমি এই কাজটিকে আমার আখিরাতে
সম্বল মনে করি। আমি পতিতা প্রধানদের বলেছি, "যে তার মেয়েকে বিয়ে করাবে, আমি
তার মেয়ের বিয়ের সমস্ত খরচ বহন করব।"
আমি দেখেছি তারা অনেক নির্যাতিত হচ্ছে, অনেক নির্যাতিত। পুরুষের যৌনতা পুরো
হয়, আর মেয়ের কপালে পতিতার দাগ লেগে যায়। পুরুষ সেইভাবেই চৌধুরী সাহেব থাকে, সেট
সাহেব থাকে, মিয়া সাহেব থাকে, সরদার সাহেব থাকে, তার কলার সেইভাবেই সাদা থাকে। মেয়ের
কপালে পতিতার দাগ লেগে যায়। সাত সমুদ্রের পানিও সেই দাগ মুছতে পারে না। যেই সকল লোকেরা
ফুর্তির জন্য এই কাজ করেছে, তাদের ফুর্তির ওপর তো পর্দা পড়ে গিয়েছে। তার কপালে কালো
দাগ লেগে গিয়েছে। অনেক বড় পতিতা। তার মেয়েরা যুবতী, আমি বললাম, "তুমি তাদের
বিয়ে করিয়ে দাও। আমি বিয়ের সকল খরচ বহন করব।"
পতিতা বলল, "মাওলানা সাহেব, পতিতার বাড়িতে কে সম্পর্ক করতে চায়?"
এ কথা শোনার পর আমার মনে হলো, কেউ আমার হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।
পতিতা বলল, "পতিতার বাড়িতে কে সম্পর্ক করতে চায়?
এখানেতো সম্মানের সাথে খেলা করতে আসে। সম্পর্ক করতে কেউই আসে না।"
আমি এই কাজটিকে, আমার আখিরাতে সম্বল মনে করি। কম থেকে কম পতিতালয়ের
পুরো মহল্লা নামাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেককে আমি ওমরায় পাঠিয়েছি। সেখানে পুরুষদের
মধ্যে একজন প্রধান হয়, মহিলাদের মধ্যে একজন প্রধান হয়। সেখানকার একটি নিয়ম আছে।
আমি তাকে ফোন করে বললাম, "তুমি প্রস্তুতি নাও, আমি তোমাকে ওমরায় পাঠাবো।"
সে মহিলাটি আমার জন্য অনেক দোয়া করলো। আমি চাই তোমরা এভাবে
তাবলীগ করো। আমার ইচ্ছে হচ্ছে, আল্লাহ আপনাদের ভিতরে তাবলীগ জীবিত করে দেন। অতঃপর আপনারা
মিম্বরে বসেন, চেয়ারে বসেন, মাদ্রাসায় বসেন, দোকানে বসেন, ঘোড়ারাতে বসেন, গাড়িতে
বসেন, বাতাসে উড়েন, তাবলীগ তোমাদের ভিতর হোক। আমি এ বিষয়ে দলিল দিচ্ছি।একজন পতিতার
এসে নবীজিকে (স.) বলল, "এটি কেমন নবী কাউকে রুটি খাওয়ায় না?"
সে নবীজীকে (স.) কষ্ট দিতে চেয়েছিল, বিরক্ত করতে চেয়েছিল। যদি নবীজি (স.) বলতেন,
এই পতিতাকে তাকে ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের করো।কিন্তু নবীজি (স.) বললেন, "আসো,
বস।"
সাথে বসিয়ে নিলেন!
নবীজী (স.) বললেন, "খাও।"
তার উদ্দেশ্য খাওয়া ছিল না। তার উদ্দেশ্য ছিল, নবীজীকে (স.) রাগান্বিত করার, বিরক্ত করার। নবীজিকে (স.) নিয়ে কটুক্তি করা তার উদ্দেশ্য
ছিল। পতিতা বলল, "আমি এটি খাব না। যা আপনার মুখের চাবাচ্ছেন সেটি খাব।"
নবীজি (স.) তৎক্ষনাত তার মুখ থেকে খাবার বের করে পতিতার মুখে তুলে দিলেন। সে কি জানত, যে নবীজির মুখের লালা যদি কারো মুখে যায় আল্লাহর ফজলে সে হেদায়েত পেয়ে যাবে। সে তৎক্ষণাৎ হেদায়েত পেয়ে গেল। সে কালেমা পড়ে, মুসলমান
হয়ে গেল। সে মদিনার সম্মানী সাহাবিয়া হয়ে গেলেন। আমাদের একজন বুজুর্গ ছিলেন, ডাক্তার
আসলাম সাহেব (রহ.)। যখন আমি রায়মন্ড মাদ্রাসায় পড়তাম। তখন তিনি সেখানে ছিলেন, সেখানেই
তার মৃত্যু হয়েছে। নিজামুদ্দিন গেলেন মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ.) সাথে সাক্ষাৎ করতে।
তিনি ইলিয়াস সাহেবকে (রহ.) বললেন, "আমার কাছে আধাঘন্টা সময় আছে, আপনি আমাকে
তাবলীগ কি বুঝিয়ে দিন।"
মাওলানা ইলিয়াস সাহেব (রহ.) জিজ্ঞাসা করলেন, "কি করো?"
সে বলল, "আমি ডাক্তার।"
নিকটে মেওয়াতের একজন বৃদ্ধ বসেছিল। তিনি সেই ডাক্তারকে বললেন, "তুমি সেই বৃদ্ধকে আধাঘণ্টায় ডাক্তারি কি তা বুঝিয়ে দাও।"
সে বলল, "আমি আধাঘণ্টায় এই অজ্ঞকে ডাক্তারি শিখাবো! আমার বয়স শেষ হয়ে গিয়েছে ডাক্তারি শিখতে গিয়ে।"
ইলিয়াস সাহেব (রহ.) বললেন, "তাহলে বলো আমি কিভাবে তোমাকে আধা ঘন্টার ভিতরে তাবলিক শেখাবো?
সময় নিয়ে এসো অতঃপর তোমাকে বুঝাবো।"
অতঃপর দ্বীনের কাজে তিনি এভাবে করেছেন, পুরো জীবন দাওয়াতের কাজ করতে করতে অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ
হয়ে বাসায় যান, সেখানেই তার মৃত্যু হয়। আমি ৫০ বছর ধরে তাবলীগ করছি। আমি মিম্বরের
এক ঘন্টার ওয়াজের মধ্যে তোমাদের কিভাবে এগুলো বুঝাবো?
এইজন্য আমি তোমাদের পরামর্শ দেই, যা বলি তা করে নিও, লাভবান হবে। এখনই ফতুয়া দেওয়া শুরু
করে দিও না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাচ্চারা পুরো পৃথিবীতে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার
নিয়ত করো। ঠিক আছে?
No comments