নবীজির জানাজার হৃদয় বিদারক ঘটনা! - মাওলানা তারেক জামিল (বাংলা সাবটাইটেল সহ)


আম্মাজান আয়েশা (রাযি.) একমাত্র মহিলা সমগ্র পৃথিবীতে, যার বুকে মাথা রেখে কোন নবী ইন্তেকাল করেছেন। আম্মাজান (রাযি.) সোজা হয়ে বসে ছিলেন, নবীজি (স.) তার বুকের উপর মাথা রেখেছিলেন। নবীজির (স.) শেষ বাক্য ছিল, "ইয়া আল্লাহ! আমাকে আপনার নিকটে ডেকে নিন।"

অতঃপর নবীজী (.) ইন্তেকাল করলেন। আম্মাজান আয়েশা (রাযি.) চিৎকার করলেন। নবীজির (স.) স্ত্রীরা কান্না করতে করতে ভিতরে আসলেন। আবু বক্কর (রাযি.) যখন জানতে পারলেন, তখন দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে আসলেন। এসে চাদর উঠিয়ে নবীজির কপালে চুম্বন করলেন। তার দুই চোখ থেকে কান্নার অশ্রু পরল। হায়! আমার নবী, হায়! আমার বন্ধু, আজকে আপনি আমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন কিন্তু আল্লাহ আপনাকে আজকের পর আর কখনো মৃত্যু দিবেন না। এখন আর আপনি কখনো দুঃখের সম্মুখীন হবেন না। আবু বক্কর (রাযি.) মসজিদে গেলেন, তখন দেখলেন মসজিদ লোকে-লোকারণ্য। কেউ কান্না করছে, কেউ চিৎকার করছে, কেউ চুপ হয়ে বসে আছে। ওমর (রাযি.) তরবারি নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলছেন, "কেউ বলবে না যে, নবীজি (স.) ইন্তেকাল করেছেন। যদি কেউ বল, তাহলে তার মাথা উড়িয়ে দিব।"

আবু বক্কর (রাযি.) এসে মিম্বরে দাঁড়ালেন। দাঁড়িয়ে ওমরকে (রাযি.) বললেন, "তুমি বসে যাও।"

ওমর (রাযি.) বললেন, "বসবো না।"

আবু বক্কর (রাযি.) বললেন, "হে লোকসকল! যারা মোহাম্মদ মোস্তফার (.) পূজা করতে, আজকে আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়ে দিয়েছেন। আর যারা আল্লাহর পূজারী, তাদের আল্লাহ জীবিত। মৃত্যু থেকে পাক।"

অতঃপর এই আয়াত পড়লেন...

দ্বিতীয় আয়াত এটি পড়লে...

এই কথাগুলো শোনার পর আমার মনে হল, যেন আমার পা থেকে যান বের হয়ে গিয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ আমি বসে গেলাম এবং আমার বিশ্বাস হয়ে গেল যে, আল্লাহর নবী (.) ইন্তেকাল করেছেন। আমার কাছে মনে হল যেন এই কোরআনের আয়াত গুলো আজকেই অবতীর্ণ হয়েছে, এখনই অবতীর্ণ হয়েছে। নবীজির (স.) মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বের ঘটনা। সাহাবীরা (রাযি.) আসলে নবীজি (স.) বললেন, "আমার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে সালাম। আমার পর যেই সকল আমার উম্মত আসবে, তাদেরকে আমার সালাম। তাদের পর আমার যে সকল উম্মত আসবে তাদেরকেও  সালাম।"

এরকমভাবে সালাম কোন নবী তার উম্মতকে দিয়ে যায় নাই। আনাস (রাযি.) নবীজীকে (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, "ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার মৃত্যুর পর আপনাকে কে গোসল দিবে?"

নবীজি (স.) বললেন, "আমার আহলুল বাইত।"

আনাস (রাযি.) নবীজীকে (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনাকে কাফন কে দিবে?"

নবীজি (স.) বললেন, "আমার আহলুল বাইত।"

আনাস (রাযি.) নবীজীকে (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনাকে কবরে কে নামাবে?"

নবীজি (স.) বললেন, "আমার আহলুল বাইত।"

আনাস (রাযি.) নবীজীকে (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনার জানাজা কে দিবে?"

এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে, নবীজির (.) চোখে পানি চলে আসলো। নবীজি (স.) বললেন, "যখন আমাকে গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে দিবে, তখন সবাই বাইরে চলে যাবে। এরপর আল্লাহর রহমত আমার উপর নাযিল ফরমাবেন। অতঃপর জিব্রাইল (আ.) ও মিকাইল (আ.) এসে আমার জন্য দোয়া করবে। অতঃপর সাত আসমানের সমস্ত ফেরেশতারা এসে আমার জন্য দোয়া করবে। অতঃপর আমার আহালুল বাইত আসবেন, এসে আমার জন্য দোয়া করবে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের মহিলারা আসবেন। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের সন্তানেরা আসবে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের গোলামরা আসবে। অতঃপর মুহাজিরা আসবে, তারা এসে আমার জন্য দোয়া করবে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের মহিলারা আসবেন। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের সন্তানেরা আসবে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের গোলামরা আসবে। অতঃপর আনসারা আসবে, তারা এসে আমার জন্য দোয়া করবে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের মহিলারা আসবেন। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের সন্তানেরা আসবে। তারা চলে যাওয়ার পর তাদের গোলামরা আসবে। অতঃপর আমাকে আমার আল্লাহর কাছে হস্তান্তর করে দিও।"

সবাই ব্যক্তিগতভাবে এসে নবীজির (স.) জন্য দোয়া করছিল। যার কারণে সোমবার ও মঙ্গলবার দোয়ার মধ্যেই চলে যায়। বুধবার রাত্রে নবীজিকে (স.) আল্লাহর কাছে হস্তান্তর করা হয়। যখন নবীজীকে (স.) হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.), হযরত আলী (রাযি.) ও সাকরান নবীজির (স.) গোলাম তাকে কবরে নামিয়ে বের হয়ে এলেন। তখন মুগীরা বিন শোহবা (রাযি.) আংটি খুলে, নবীজির (স.) কবরের মধ্যে ফেললেন। তিনি হযরত আলীকে (রাযি.) জিজ্ঞাসা করলেন, "আমার আংটি পড়ে গিয়েছে, বের করে নিব?"

হযরত আলী (রাযি.) বললেন, "এখনতো কবর বন্ধ করা হয় নাই, বের করে নাও।"

আংটিতো ইচ্ছে করে ফেলেছিল। কবরে গিয়ে তিনি আল্লাহর নবীকে (স.) জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকলেন। আংটি বাহানা বানিয়েছিলেন, নবীজীকে (স.) জড়িয়ে ধরে কান্না করার জন্য। উপর থেকে মানুষ বলতে থাকলো, বের হও, বের হও, বের হও। তিনি শেষ মানুষ যার শরীর নবীজির (স.) পাক শরীরের সাথে স্পর্শ হয়েছিল, তিনি মুগীরা বিন শোহবা (রাযি.)। অতঃপর নবীজির (স.) দাফন কার্য সম্পন্ন করা হলো। 

No comments

Powered by Blogger.