মনের শান্তি কিভাবে পাব? - মাওলানা তারিক জামিল (বাংলা সাবটাইটেল সহ)
১৯৯৭ সালের জুনায়েদ জামশেদ (রহ.) কে এক যুবক আমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসে।
একজন পাকিস্তানী গীতিকার আছে, আপনার সাথে দেখা করতে চায়।করাচির ইজতেমায় গিয়েছিলাম।ইজতেমার ময়দানে লোক থাকার কারণে, সে চেহারা লুকিয়ে রেখেছিল।সে এসে আমার সামনে বসলো।আমরা তার সাথে পূর্ব পরিচয় ছিল না।
আমি প্রশ্ন করলাম, "কি করো।"
সে বললো, "আমি মিউজিক করি।"
আমি বললাম, "গান করো নাকি বাদ্যযন্ত্র বাজাও?"
সে বললো, "গান করি।দিল দিল পাকিস্তান আমি গেয়েছি।"
কথাবার্তা এক পর্যায়ে, সে আমাকে একটি প্রশ্ন করল।
"একটি প্রশ্ন করব।"
আমি বললাম, "করো।"
সে বললো, "একজন পাকিস্তানী যুবক যেই জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের স্বপ্ন দেখে, আমার তা বাস্তবে রয়েছে।কিন্তু আমার মনে শান্তি নেই।মনের মধ্যে অন্ধকার।আমার কাছে মনে হয় আমার কোন উদ্দেশ্য নেই, গন্তব্য নেই।আমার সব ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, কিন্তু এইরকম কেন?"
আমি বললাম, "সহজ বিষয়।তোমার ব্যথা ডান পায়ে, ওষুধ লাগাচ্ছো বাম পায়ে।যেখানে ব্যথা নেই সেখানে ওষুধ দিচ্ছো, যেখানে ব্যথা আছে সেখানে ওষুধ দিচ্ছো না।এই অন্ধকার তোমার রুহ এর মধ্যে, তোমার শরীরের মধ্যে নয়।তুমি রুহের খোরাক পাঁচ তারকা হোটেলে, গানে, জাঁকজমকপূর্ণ জীবনে খুঁজছো।রুহ চায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (স.) সাথে সম্পর্ক করতে।"
সে বললো, "তাহলে কি করব?"
আমি বললাম, "তিন দিনের জন্য তাবলিগে যাওয়া শুরু করো।" আল্লাহ’তায়লায় সে তিন দিনের জামাতে যাওয়া শুরু করে দিল।এটি ১৯৯৭ সালের কথা।২০০১ সালে সে তিন চিল্লার জন্য বের হয়ে গেল।
আমাকে ফোন করলো, "মাওলানা সাহেব! আমি বালাকোটে একটি পুরাতন মসজিদ আছি।সে মসজিদের ভাঙ্গা জমিনে যে, ছেঁড়া মাদুর আছে আমি সেই মাদুরের উপর শুয়ে আছি।আমার মনের শান্তি আমি পাঁচ তারকা হোটেলে, গানের মধ্যে খুঁজতাম সেই শান্তি আমি এখানে পেয়ে গিয়েছি।আমার মনে হচ্ছে বাতাসের মধ্যে উড়ছি।"
বাচ্চারা আল্লাহ আপনাদের সুযোগ দান করুন, তাবলীগে সময় লাগানোর জন্য।আপনারা ছেলে-মেয়ে এখানে একত্রে লেখাপড়া করেন।নিজেদের নজর এর পর্দা অবশ্যই করুন।নজরের খারাপ ব্যবহার সমাজকে ধ্বংস করে দেয়।সমাজে খারাপ কাজকে প্রসারিত করে।যখন সমাজে খারাপ কাজ বৃদ্ধি পায়, তখন দ্রুত গতিতে ধ্বংস নেমে আসে।আর সেই ধ্বংসকে দুনিয়ার কোন শক্তির আটকাতে পারবেনা।নিজের মধ্যে একটি দূরত্ব রাখুন।আমি এতোটুকুই বলতে পারবো।
আর কারো সাথে ঝগড়া থাকলে, তার সাথে সমঝোতা করুন।সমঝোতার সাথে থাকুন, ভালোবাসার সাথে থাকুন।চলা-ফেরার পথে নজরের হেফাজত করা শিখে গেলে, দুনিয়ার কোনো শক্তি আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে পারবেনা।নজরের হেফাজত করতে না পারলে, তাহলে আল্লাহ হেফাজত করুক।অনেক ক্ষতির মধ্যেচলে যায় মানুষ।শেষ কথা হচ্ছে।বাচ্চারা তোমরা এখন জীবন শুরু করছো, আমাদের জীবন শেষ হচ্ছে।মুসলমান হয়ে জীবন-যাপন করো, ফেরকার শিকার হয়ে জীবন-যাপন করো না।ফেরকার মধ্যে বিভক্ত হয়ে জীবন-যাপন করোনা, উম্মত হয়ে জীবন-যাপন করো।নিজের পরিচয় উম্মত দাও।আমরা মুসলমান।বাকি সব পরিচয় ঝগড়ার পথে নিয়ে যায়।আমাদের একটি পরিচয় মুসলিম! মু'মিন! উম্মত! এটা নিজের পরিচয় তৈরি করো।এটা তখন হবে যখন তুমি কোরআন পড়বে, সিরাত পড়বে।কোরআন পড়ো, সিরাত পড়ো।
তখন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে যে, আমার কিভাবে জীবন-যাপন করতে হবে।
No comments